শিশু স্বাস্থ্য

 অযথা অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শিশুর জন্য মারাতœক ক্ষতি

ডাঃ এস কে দাস,এমএসসি, ডিএইচএমএস ঃ অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার করে শিশুসহ অসংখ্য মানুষ দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামান্য প্রয়োজনে কিংবা প্রয়োজন ছাড়াই চিকিৎসকের পরামর্শ এড়িয়ে নিজেরাই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে রোগী। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারন শিশুরা। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হবার পাশাপাশি দেখা দিচ্ছে জটিল রোগ ।  বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক অপব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, অনেক ডাক্তার রোগীর অনুরোধেও প্রেসক্রিপশনে অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দেন। কিন্তু অনেক রোগী তা নির্ধারিত সময় ধরে ব্যবহার করেন না। অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা মতে অ্যান্টিবায়োটিক হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ফাঙ্গাস কিংবা ব্যাকটেরিয়া থেকে পাওয়া বা ল্যাবে সিনথেসিস করা এমন কিছু ওষুধ যেগুলো মানব শরীরের বিভিন্ন জীবাণু (সাধারণত ব্যাকটেরিয়া) ধ্বংস করে বা তাদের বিকাশ প্রতিহত করে দেয়। অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে অন্য ওষুধের তফাত হচ্ছে এগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিয়মিত খেতে হয়। যেমন অসুস্থতাভেদে অ্যান্টিবায়োটিক তিন থেকে পাঁচ দিন, সাত দিন বা ১৪ দিনও খেতে হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পাওয়া যায় না। এমনকি তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব বয়ে আনতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার শরীরে মারাতœক ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আসতে পারে। এটা হয় প্রধানত অ্যান্টিবায়োটিকের ডোজে অনিয়ম হলে কিংবা কোর্স স¤পূর্ণ না হলে। একটা জীবাণু শুধু তখনই রোগ সৃষ্টি করে যখন তা থেকে তৈরি কোনো ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এ জীবাণুর সংখ্যা কমিয়ে ফেললে স্বাভাবিকভাবেই ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণও কমে যায়। রোগী তখন নিজেকে সুস্থ ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বন্ধ করে দেয়। কিন্তু জীবাণু তখনো থাকে রোগীর শরীরে। পরিমাণে অল্প বলে কোনো উপসর্গ দেখাতে পারে না। এ জন্য জীবাণুকে নির্দিষ্ট ডোজ পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চাপের মধ্যে রাখতে হয় যাতে সর্বশেষ জীবাণুও বেঁচে না থাকে। চিকিৎসকদের মতে দেহকে যখন কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই নিজের মতো যুদ্ধ করতে দেওয়া হয়, তখন এটি সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দিষ্ট অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা আবিষ্কারে পটু হয়ে ওঠে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সংক্রমণ প্রতিরোধেও দেহের ক্ষমতা বেড়ে যায় অনেক গুণ। অ্যান্টিবায়োটিক রোগপ্রতিরোধে কার্যকর কোষগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। তাই অ্যান্টিবায়োটিক বর্জন করে দেহকে তাদের শত্র“ চিনতে দিলে পরে তারা নিজেরাই এগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে। তাই অযথা শিশুদেরকে সামান্য জ্বর কিংবা অন্য কোন রোগে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বর্জন করবেন।
পুরো শীতকাল জুড়েই শিশুকে সুস্থ রাখতে কি কি করবেন ?
 শীতে শিশুরা অতিরিক্ত ভিটামিন সি পাবে এমন খাবার দিতে হবে। নবজাতককে শীতের সময় গোসল না করানোই ভালো। তবে নরম কাপড় হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে শরীর মুছে দেওয়া যেতে পারে।    এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদেরও উলের বা মোটা সুতির গরম কাপড়ে রাখতে হবে। তবে বাচ্চার শরীর ঘেমে যায়, এমন কাপড় যেন না হয়।  একটু বড় শিশুকে অবশ্য গোসল করাতে হবে, নইলে চর্মরোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গোসলের সময় চুল টেনে চুলের গোড়ার ময়লা পরিষ্কার করে দিতে হবে। এতে মাথার ত্বক সুস্থ থাকবে।
পাশাপাশি সাধারন যে কোন অসুখে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহন করলে শিশুর মেধাশক্তি যে কোন শিশু চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যায়। তাই আপনার শিশুকে অযথা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না।
গবেষণায় আরও বলা হয়, অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার শরীরে এন্ডোটক্সিন নিঃসরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। এতে দেহের রোগপ্রতিরোধব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।যারা অ্যান্টিবায়োটিক খুব কম সেবন করেন তাদের তুলনায় যারা দিনে ছয়টি বা ততোধিক অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছেন তাদের সাধারণ ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি দেড় গুণ বেশি। সামান্য অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য পরিচিত রিস্ক ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে মেদ বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস, ধূমপান ও অ্যালকোহল রয়েছে। ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ক্যান্সার-এ প্রকাশ পাওয়া একটি গবেষণা অনুযায়ী, যারা দুই থেকে পাঁচটি অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন নিয়েছেন তাদের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।
ডাঃ এস কে দাস, এম.এসসি, ডিএইচএমএস, ০১৮১১৮৯৮০৬১





শিশুর দাঁতের ক্ষয়রোগ

 শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য তার মুখগহ্বরের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি। জন্মের পর থেকে শিশুর এই যত্ন শুরু করা চাই। আর শিশুর বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি দাঁতের যত্ন পুরোদমে নিতে হবে।
শিশুর ডেন্টাল কেরিজ বা ক্ষয়রোগে দাঁতের অবস্থা, ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর উপস্থিতি ও শর্করাযুক্ত খাবার গ্রহণ—এ তিনের ভূমিকা প্রধান। স্টেপটোককসাই মিউটেনম নামের মুখগহ্বরের ব্যাকটেরিয়া দাঁতের এনামেল নষ্ট করে প্রধানত ক্ষয়রোগের সুযোগ সৃষ্টি করে। পরে তার সঙ্গে যোগ হয় অন্য জীবাণু।
যখন মা-বাবা শিশুকে জুসভর্তি ফিডার বা বোতল মুখে পুরে দিয়ে ঘুমানোর কাজ সারেন—তা নিঃসন্দেহে দাঁত ক্ষয়ের পথ সুগম করে দেয়। দাঁতের ক্ষয়রোগ উৎপাদনে মুখের ভেতর বেশিক্ষণ ধরে পুরে রাখা শর্করাযুক্ত খাবার অনেকাংশে দায়ী। এ ক্ষেত্রে চুইংগাম বিভিন্ন কোমল পানীয়র শর্করার তুলনায় বেশি ক্ষতিকর।
সাধারণভাবে মোলার দাঁতের (ভেতরের দাঁত) প্রান্ত থেকে ক্ষয় বা পোকায় খাওয়া শুরু হয়। এই পর্বে তা থামানোর ব্যবস্থা না করা হলে দাঁতের আরও গভীরে ঢোকে। পালপাইটিস হয়, মাড়িতে ও দাঁতের চারপাশে পুঁজ, প্রদাহ হয়। আরও ছড়িয়ে তা পাশের দাঁত নষ্ট করে, চোয়ালের অস্থিও ছুঁতে পারে বা মুখ ও মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে যায়।
নষ্ট হওয়া দাঁত চিহ্নিত করতে হবে আগে। ব্যথা-বেদনার জন্য ওষুধ দিতে হবে। সংক্রমণ কতটুকু ছড়িয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে খাওয়ানোর
কিংবা ইনজেকশনের সাহায্যে অ্যান্টিবায়োটিকস দেওয়া যেতে পারে।
প্রতিরোধটাই আসল। শিশুর প্রতি রাতে ও সকালে দুবার ব্রাশ করা, নিয়মিত মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য-পরিচর্যা মানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরও জরুরি শিশুকে খাওয়ানোর অভ্যাসে বোতল ফিডার ব্যবহার না করা।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top